রাসূলে খোদা (দঃ) হলেন সৃষ্টির প্রথম (১ম পর্ব)
সংকলনেঃ
মাওলানা মোবাশ্বির হোসাইন আল-ক্বাদেরী
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্ব প্রথম কি সৃষ্টি করেছেন এ নিয়ে ওলামায়ে কেরামের মাঝে অনেক মতানৈক্য রয়েছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সকল ওলামা,ফোকাহা,আইম্মায়ে কেরামের ঐক্যমত পোষন করেছেন যে, আল্লাহ পাকের সর্বপ্রথম সুষ্টি হলেন নূরে মুহাম্মদী দঃ । অতঃপর বাকী সবকিছু আমার নবীর নূর মোবারক হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। আসুন আমরা জেনে নেই আল্লাহ সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেছেন।
হযরত উবাদা ইবনে সামেত রাঃ হতে বর্ণিত,
ان اول ما خلق الله القلم فقال اكتب فقال يارب مااكتب؟قال اكتب القدر ما كان هوكائن الى الابد. অর্থাৎ; নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা রাব্বুল আলামীন সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন কলম (قلم)।অতঃপর কলমকে বললেন, লিখ,কলম বলল: হেআমার রব! কি লিখব? আল্লাহ বলেন: লিখ ইতিপূর্বে যা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত যা কিছু হবে।
সূত্রঃ ক.মুসনাদে আবু দাউদ ত্বয়ালুছী,হাদিস নাম্বার-৫৭৮। খ. মুসনাদে ইবনে জা’দ, হাদিস নাম্বার-৩৪৪৪। গ. মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নাম্বার-২২৭০৭। ঘ. তিরমিযি শরীফ, হাদিস নাম্বার-২১৫৫।
হাদিস পর্যালোচনাঃ
অত্র হাদিসখানা পর্যালোনা করলে আমরা দেখতে পায়, হাদিসটিতে দুইটি পর্যায় বিদ্যমান। প্রথম অংশ দ্বারা বুঝা যায় প্রথম সৃষ্টি হচ্ছে (قلم) কলম। আর ২য় অংশ দ্বারা বুঝা যায় প্রথম সৃষ্টি কলম নয় বরং অন্য কিছ্ ুযদি কলম প্রথম সৃষ্টি হইতো তাহলে এই কথা বলা হতোনা যে, اكتب القدر ما كان هوكائن الى الابد লিখ ইতিপূর্বে যা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত যা হবে। এখানে ما كان শব্দটি অতিতকালে সংগঠতি বিষয়কে ইঙ্গিত করেছে।বুঝা গেল কলম প্রথম সৃষ্টি নয় । আর যা বলা হয়েছে এটা একমাত্র কলমের সম্মানার্থে বলা হয়েছে। এখন জানতে হবে কলমের পূর্বে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত কি সৃষ্টি করেছেন।
মুসলিম শরীফে কিতাবুল ক্বদর অধ্যায়ে রয়েছেঃ
عن عبد الله بن عمرو ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله قدر مقادير الخلق قبل ان يخلق السموات والارض بخمسين ألف سنة وكان عرشه على الماء. অর্থাৎ; হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ হতে বর্ণিত; রাসুলে খোদ (দঃ) এরশাদ ফরমান; নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাকদীর সৃষ্টি করেছেন আসমান যমনি সৃষ্টি করার ৫০ হাজার বছর পূর্বে। আর তখন আল্লাহর আরশ ছিলো পানির উপরে।
সূত্রঃ ক. সহীহ মুসলিম,তাকদীর অধ্যায়,হাদিস নং-২৬৫৩।খ.তাফসিরে ইবনে কাছির,৩য় খন্ড-৪৬৩, পৃষ্ঠা।গ.শরফুল মু¯তফা,১ম খন্ড-৩১০পৃষ্ঠা।
হাদিস পর্যালোচনাঃ
এই হাদিস শরীফ দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে,কলম কর্তৃক লিখিত ‘তাকদীর’ সৃষ্টি করার আরো ৫০ হাজার বছর পূর্বে আল্লার আরশ ছিল পানির উপর।এখন দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলা যায় কলমের পূর্বে যা সৃষ্টি হয়েছে তা-হলো আল্লাহর আরশ।
এ বিষয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা তথা ফতোয়া দিয়েছেন শারীহে বুখারী আল্লামা ইমাম কাস্তোলানী(রঃ) (ওফাত ৯২৩হিজরী) তদীয় কিতাব “মাওয়া হেবুললাদুন্নিয়া”শরীফে উল্লেখ করেন-
فقال الحافظ ابو يعلى الهمدانى: الاصخ ان العرش قبل القلم. لما ثبت فى الصحيح عن عبد الله بن عمرو قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قدر الله مقادير الخلق قبل ان يخلق السموات والارض بخمسين ألف سنة وكان عرشه على الماء- আর্থাৎ হাফিজুল হাদিস ইমাম আবু ইয়ালা হামাদানী(রঃ) বলেন:অত্যাধিক বিশুদ্ধ মত হলো, আল্লাহর আরশ সৃষ্টি হয় কলম সৃষ্টি হওয়ার বহু পূর্বে।যেমনটি হযরত আব্দুল্লা ইবনে আমর (রাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে।
সূএঃ মাওয়া হেবুল্লাদুন্নিয়া,১ম খন্ড-৪৮ পৃষ্টা।
একটি (দ্বয়ীফ) কিংবা জাল হাদিসঃ
اول ما خلق الله العقل অর্থাৎ; আল্লাহ রাব্বুল আলামনি সকল কিছুর পূর্বে “আক্বল” বা জ্ঞান সৃষ্টি করেছেন। এই বর্ণনা সম্পর্কে হাফেজুল হাদিস আল্লামা ইমাম ইরাকী রাঃ বলেন- باسنادين ضعيفين এর প্রত্যেকটি সনদ দ্বয়ীফ।
সূত্রঃ তাখরিজে এহইয়া,কাশফুল খফা।
ইমাম আল্লামা সাগানী রঃ বলেন- قال الصغانى: موضوع باتفاق
সর্বসম্মতিক্রমে এই হাদিস জাল (কাশফুল খফা) ।
সবশেষে হিজরী ৮ম শতাব্দীর মোজাদ্দির শারিহে বুখারী আল্লামা হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী রঃ (ওফাত-৮৫২হিজরী) বলেন-
وقد قال شيخنا يعنى العسقلانى والوارد اول ما خلق حديث اول خلق الله القلم وهو اثبت من حديث العقل. নিশ্চয় আমাদের শায়েখ হাফিজ আবুল ফজল ইবনে হাজার আসকালানী রঃ বলেছেন- প্রথম সৃষ্টির বিষয়ে বর্ণনা করেন-আল্লাহ তাআলা প্রথমে আকল সৃষ্টি করেছেন এই হাদিস থেকে আল্লাহ প্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন এই হাদিস অত্যধিক প্রমাণিত।
সূত্রঃ ক. মাওজুয়াতুল কুবরা,হাদিস নং-১০৭.খ. শরহে যুরকানী আলাল মাওয়াহেব, ৬ষ্ট খন্ড-১৫পৃষ্ঠা।
এখন জানতে হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরশ সৃষ্টির পূর্বে কি সৃষ্টি করেছেন?
তারিখে তাবারি শরিফে উল্লেখ রয়েছে-
حدثنا موسى بن هارون الهمدانى, قال: حدثنا عمروبن حماد,قال: حدثنا اسباط بن نصر, عن السدى فى خبر ذكره, عن ابى مالك وعن ابى صالح, عن ابن عباس وعن مرة الهمدانى عن عبد الله بن مسعود وعن ناس من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم قالوا: ان الله عز وجل كان عرشه على الماء, ولم يخلق شيئا غير ما خلق قبل الماء. অর্থাৎ; হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও হামাদানীর এক ব্যক্তি হজরত ইবনে মাসউদ রাঃ ও রাসুলে খোদা (দঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তাঁরা সকলেই বর্ণনা করেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার আরশ পনির উপরে ছিল। আর পানি সৃষ্টি করার পূর্বে কোন কিছুই সৃষ্টি করেন নি।
সূত্রঃ তারিখে তাবারি ১ম খন্ড,৩৯ পৃষ্ঠা।
সুতরাং একেবারেই পরিস্কার হয়ে গেল, আল্লাহর আরশের পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে পানি। আর তখন আরশ ছিল পানির উপর ভাসমান অবস্থায়।
এই বিষয়ে আরো সুন্দর বক্তব্য দিয়েছেন আল্লামা আবু জাফর তাবারি রঃ (ওফাত ৩১০ হিজরী)।
خلق الله عز جل الماء قبل العرش, ثم خلق عرشه فوضعه على الماء. অর্থাৎ; আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরশ সৃষ্টি করার পূর্বে পানি সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশ সৃষ্টি করে পানির উপর রাখলেন।
সূত্রঃ তারিখে তাবারি,১ম-খন্ড,৩৯পৃষ্ঠা।
বুঝা গেল পানিই আল্লাহর ১ম সৃষ্টি যার আরশের পূর্বে সৃষ্টি করা হয়েছিল। কারণ আল্লাহর আরশ ও কলমের পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে পানি।
চলবে.....
Subhanallah
ReplyDelete